আব্দুল হাই সঞ্জু : চীন অনেক ধনী দেশ, সামরিক শক্তিও তাদের অনেক বেশি। রাশিয়া ধনী এবং সামরিক শক্তিতে বিশ্বের শীর্ষ দেশ। ভারতও বিশ্বের উদীয়মান অর্থনৈতিক এবং সামরিক শক্তি। কিন্তু এই তিন দেশে গিয়ে বসবাসের স্বপ্ন দেখে না বাংলাদেশিরা। এসব দেশে খুব বেশি টাকাও পাচার হয় না বাংলাদেশ থেকে। 

বাংলাদেশিরা আসতে চায় ইউরোপ, আমেরিকা, ব্রিটেনে। টাকাও পাচার করে এসব দেশে। কারণ এসব দেশে স্বাধীনতা আছে। জীবন উপভোগের সুযোগ আছে, ধর্ম পালনেও কোনো বাধা নেই। আর সর্বোপরি শত শত বছর ধরে চলমান মাইগ্রেশনের কারণে ইউরোপ, আমেরিকা, ব্রিটেনে এলে অনেক আত্মীয়-স্বজন পায় বাংলাদেশিরা। এই ধারাবাহিকতা পশ্চিমা বিশ্বের জন্য একটা শক্তি। এই সম্পর্ক অর্থ দিয়ে পরিমাপ করা সম্ভব না, এই সম্পর্ক একদিনের নোটিসে বাতিল করে দেওয়া বাংলাদেশের পক্ষে অসম্ভব। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের সম্পর্ক বিবেচনায় না নিয়ে কেবল এই সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক বিবেচনায় নিলেও বাংলাদেশের পক্ষে চীন, রাশিয়া, ভারতের দিকে ঝুঁকে যাওয়া সম্ভব নয়।  

চীন এবং সৌদি আরবের মধ্যে একটিকে বেছে নিতে বললেও বাংলাদেশের সৌদি আরবকেই বেছে নিতে হবে, বেছে নিতে বাধ্য হবে বাংলাদেশ। কেননা চীনের নগদ অর্থের ঋণ বাংলাদেশ নানাভাবে পরিশোধ করে দিতে পারবে, কিন্তু সৌদি আরব থেকে লাখ লাখ শ্রমিক ফিরিয়ে আনতে পারবে না। চীনের অবাধ্য হয়ে শ্রীলংকার মতো দেউলিয়া হওয়াও বাংলাদেশের পক্ষে সহজ। কিন্তু সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা সম্ভব না।  বাংলাদেশিরা চীনের চেয়ে বরং জাপানে বসবাস করতে অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নিঃস্বার্থ। অনেক বাংলাদেশি জাপানে দীর্ঘদিন ধরে সুখে-শান্তিতে বসবাস করছে। 

চীন, রাশিয়া এবং ভারত এভাবেই পিছিয়ে আছে বাংলাদেশের উপর খবরদারি করার শক্তিতে এবং এ কারণেই শেখ হাসিনা শেষ পর্যন্ত আমেরিকা, ব্রিটেন আর ইউরোপের শক্তিকে উপেক্ষা করতে পারবেন না। বাংলাদেশের মতো একটি অনিরাপদ দেশ থেকে ভবিষ্যতে তিনি চীন, রাশিয়া এবং ভারতের মতো অনিরাপদ দেশে আশ্রয় নিতে চাইবেন না। এই তিন দেশ ভরসা করার মতো দেশ নয়। সুতরাং শেখ হাসিনা আমেরিকার কথা শুনতে বাধ্য হবেন। দেখা যাক দাবার বোর্ডের পরবর্তী চাল কে কীভাবে দেয়...। ২৫ এপ্রিল ২০২৩। লন্ডন।